May 21, 2020

রিটার্ন জার্নি



সন্ধে থেকে সুচরিতা পায়চারি করেই চলেছে। এর পর নিশ্চয়ই মায়ের মতো হাঁটু ধরে বসে পড়তে হবে। আসলে সমু একবার কল  না করলে, কিছুতেই মনটা শান্ত হবে না। যে মুহূর্তে টিভি স্ক্রীন জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর ছবি এলো, সু জানত একটা কিছু ঘটবেই। কিছুদিন ধরেই তো ঘরে-বাইরে কান পাতলে একটাই কথা- দেশের নাম ও মৃতের তালিকা।
@কমলিকা

মন্ত্রী মশাই তো লক-ডাউন বলেই খালাস। এদিকে সমু যে বাইরে রয়েছে,তার কি হবে ? সমু মানে সমীরেন্দ্র সান্যাল, হাসবেন্ড অফ সুচরিতা সান্যাল, ডাকসাইটে কর্পোরেট বডির সেল্স ডিপার্টমেন্টের এগজিকিউটিভ ম্যানেজার। সবসময় হিল্লি- দিল্লী করে বেড়াচ্ছে। আজকাল ঘরে কয়টা দিন থাকে সু হাতে  গুণে বলে দিতে পারবে।

মুরাকামির নতুন কেনা বইতে কিছুতেই মন বসছে না । কাপে ঠোঁট ছুঁইয়ে মনে হলো দার্জিলিং টি নয়, যেন চিরতার রস খাচ্ছে ছোটবেলার মতো।

-   মালতী, এই মালতী, চায়ের কাপ নিয়ে যা , খাব না।

সমানে মোবাইল অনরিচেবল বলছে। নিশ্চয়ই কোনো  মিটিংয়ে ব্যস্ত। কতবার সু বলেছে ফোন চালু রেখে সাইলেন্ট মোড দিলেই তো হয়,কে শোনে কার কথা?

রিংটোনের রবীন্দ্রসংগীত যেন রাতের  এই বাংলোর মোহময় স্তব্ধতাকে বাতিল কাগজের মতো ছরররর শব্দে ছিড়ে দিল।

-   হ্যালো সু, শুনতে পারছ ? খবরটা পেয়েছো ?
-   পেয়েই তো তোমাকে কল করেই চলেছি । ২১ দিনের লক-ডাউন ডিক্লেয়ার হলো যে,কি করবে কিছু ভাবলে?
-   আমি আর ফিরতে পারছিনা ঘরে এখন। এয়ার ,রেল বা রোড ওয়েজ , পুরো বন্ধ। এত চিন্তা হচ্ছে তোমার জন্যে, কি করবে যে একা একা।
-   কি যে বলো ? আমার তো উল্টো তোমার জন্যে হচ্ছে। এখানে তো বলরাম ও মালতী আছেই। তুমি ওখানে থাকতে পারবে তো ?
-   এখানে সুপার ব্যবস্থা, নো চিন্তা। আসলে সি.ই.ও সাহেব সহ অনেকে টপ অফিসিয়াল এখানে আটকে পড়েছেন, এখন যদি ছেড়ে নিজের ঘরে ফিরে আসা নিয়ে ভাবি, সকলেই আনকালচার্ড  ভাববেন। তবে আমি তোমায় মাঝে মাঝে কল করে খবর নেব। নিজের খেয়াল রেখো। রাখছি সু, লাভ ইউ।
-   লাভ ইউ টু, টেক কেয়ার।

এতক্ষণে সু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। বাপরে, ২১ দিন ও আর সমু এক ছাদের তলায় চব্বিশ ঘণ্টা ভেবেই কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আসলে একাকীত্বের এক নিজস্ব স্বাদ রয়েছে। একবার এই স্বাদ জিভে ঠেকে  গেলে,খুব ঝামেলা। এখন ১-২ দিনেই সু-র অস্বস্তি হয়, মনে হয় যেন বিছানা, ঘর, স্বাধীনতা- সবেতে কে যেন ভাগ বসাচ্ছে।

মুরাকামী আবার হতে ফিরে এসেছে। ভাগগিস লক-ডাউন ১০ বছর আগে হয়নি । তখন তো সু নতুন বউ, তখন সু স্বামী হ্যাংলা,তখন সু বড্ড বোকা।

তখন কি সমুও তেমন বোকা ছিল? বলতো, এ সময় বাইরে যাবই না, চাকরি যাক গোল্লায়,যদি আটকে পড়ি , কিভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া? হয়তো বলতো , হয়তো বা না।

বইয়ের পাতায় ছাপার অক্ষরে লেখা, “থিংস আর নট হোয়াট দে সীম”। সু বইয়ের ভেতর  ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। রাত বাড়ছে নিজের খেয়ালে, বেড়েই চলেছে।



ফেসবুক পেজে প্রথম গল্পটি পোস্ট করি ২৬.০৪.২০২০। সেই সুত্রে এটি আমার লেখা প্রথম প্রকাশিত গল্প।  

No comments:

Post a Comment

More to see...