April 15, 2021

রনো ও আমি

@ কমলিকা

 ১)

নির্ভীক প্রেমে বুকের পাটা দরকার;

আমার রিব-কেজ গড়া সকল মাটি

রনো নিজ হাতে শাবল চালিয়েছে

 কোটর মাঝে রেখে গেছে

কিছু উডরোজ ও অক্ষরজাল,

 এখন আমি শুধু লুকিয়ে দেখি

সুদীর্ঘ কালো শঙ্খচূড়ের মতো নিশ্বাস

 দেখি আর বসে থাকি অপেক্ষায়

এক অশান্ত শ্রাবণ বৈশাখীর-

মানুষভর্তি রাস্তায় বেরিয়ে পড়বো একা

শহরের পাথুরে মাটি লেপবো বুকে

নতুন সফেদ হাড় গজাবার মন্ত্র

লিখে রেখে যাবো আরেক পাঁজর কোঠায়।



২)

চোখে বেখেয়ালে সাজিয়েছি

দুফোঁটা টলটলে গ্লিসারীন

সকল নায়িকারা সেটাই মাখে

দুঃখী শটের ঠিক আগে

এ খবর লেখা আছে

কোনো এক সিনেমার চটুল পাতায়;

যে বান আজ নেমে এলো

দেখি সে অতি সাধারণ

তাকে অশ্রু ডাকা মানায় না

ইমোশনের বড় অভাব

 কাঠ মার্কা শহুরে বাবুর মতো,

অথচ,আমার রাত জাগা গল্প জানে

তুমি এলেই চোখে আসে জল

সামনের পটে জমে ওঠে ভাপ

তোমায় দেখতে ইচ্ছে হয় রনো

তুমি কি সেই খাঁটি গ্লিসারীন

আর বাজার চলতি যা কিছু

পুরোটাই বাতিল,পুরোটাই ভেজাল?

রনোঅনেক রাত হলো

এবারে চোখে এস নেমে

কবে থেকে ক্যামেরা রোল হচ্ছে

এবার আমি শেষ শট দেবো।


প্রকাশিত ত্রিপুরা, আগরতলার ওয়েবজিন 'দৈনিক বজ্রকন্ঠে' 
১) ২৭/০৬/২০১৯     ২)১৬/০৯/২০১৯ 

প্রথম কবিতাটি ২১/১০/২০১৯ এ আলিপুরদুয়ার থেকে প্রকাশিত ওয়েবজিন 'কবিতা করিডোর'-এ ও স্থান পায়।  


April 12, 2021

প্রেমিকের বারোমাস্যা

 ‘তোমার শরীর জুড়ে ঘুরছে যে-হাত,

কখনো উত্তুঙ্গে আর অতলে চঞ্চল

হতে পারে সে এক মুগ্ধ পর্যটক

বেড়াতে এসেছে শুধু,থাকতে আসেনি।’

 

সত্যি প্রেম এক মুগ্ধ পর্যটক,নতুন আবিষ্কারে সে মোহিত হয়ে দু’চোখে চায়, বুক ভরে নিয়ে ফেরে এক অজানা পথকে নিজের চেনা ঠিকানা বানিয়ে। সেই পাওয়া না-পাওয়া প্রেম ও তার নানা রূপ নিয়ে হাজির কবি অভিজিৎ চক্রবর্তী তার এক ফর্মার বই ‘প্রেমিকের বারোমাস্যা’।


 

     আসলে কবিতা মানেই তীব্র প্রেম ও প্রতিটি কবি তার অবিচল প্রেমিক। সেই প্রেমিকের ভালোবাসার আর্তি ফুটে উঠেছে এই বইয়ের পাতা জুড়ে,বইয়ের মলাট হয়ে উঠেছে নরম লাল।

 

একটি সূত্রধর ও বাকি বারোটি কবিতা রয়েছে বারো মাসের প্রতিনিধি হয়ে এই প্রেমের রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে। বৈশাখের রবিঠাকুর, জৈষ্ঠের জামাই ষষ্ঠী থেকে চৈত্রের গাজন- কি নেই এই সন্মেলনে।

    

‘তারপর?-তারপর সেই অসমাপ্ত নিবেদন

খড় দহনে অঙ্কুরেই শুকিয়ে গেল।

আর ছেলেটা?- এখন সে গান শেখায়,

মূলত রবীন্দ্রসংগীত ।’

 

প্রেম মানে কিছুটা পাওয়া ও অনেকটা না পাওয়া। তাই কবি লিখছেন

 

‘... আপনি মহিলা কবি, যদি কোনোদিন

প্রেমিকের বারোমাস্যা লেখেন, জৈষ্ঠের এই জলকষ্ট

সবিস্তারে লিখবেন প্লিজ।’

 

      প্রেম আসবে আর বৃষ্টি আসবে না, তা কি সম্ভব? তাই আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র নিয়ে আসে ব্যর্থ প্রেমের কাদামাখা চপ্পল, পদ্মপুরাণ ও একটি গোলাপী ছাতা।  

 

‘তারপর হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে

সেই তীব্র গোলাপী ছাতাটা

ছেলেটার দিকে হেলতে থাকল

হেলতে হেলতে হেলতে

ওই  ওরা  শ্রাবণ পার হয়ে যাচ্ছে।’


প্রেম মানে আবেগ, প্রেম মানে প্রতীক্ষা, প্রেম মানে রোজকার জীবনের মাঝে একটু মন ছুঁয়ে থাকা।


 ‘নিয়ম করে চিঠি লিখত যারা

তারা জেনে গেছে, খাকি পোষ্টম্যান

পুরোনো ঠিকানায় আর তাহাকে পাবে না’

 

প্রেম আছে বলেই কার্ত্তিক এলে ঊল বোনার আবদার আছে, আছে পৌষের বনভোজনে মাফলার না পরার জন্যে বকুনি, আছে মাঘের মায়াবী রাতে আগুন আদর।

 

‘বিপুল কুয়াশায় ঢাকা

মাঘের মায়াবী রাত

পার হয়ে বসন্তের দিকে

যেতে যারা সংকল্প নিয়েছে,

তার জানে অন্তরে উষ্ণ না হলে

শীত সব গিলে খেয়ে ফেলে।’

 

     ‘প্রেমিকের বারোমাস্যা’ এক ভালোবাসার কাব্যকথা। তবু এখানে না পাওয়ার আর্তিকে কবি যেন বারবার ধরতে চেয়েছেন নানা আঙ্গিকে। এ যেন সেই মন খারাপের উদযাপন। প্রেমের উচ্ছল রূপটি এখানে খুব হালকা চলে ধরা পড়ে। বইটি হাতে ধরে পাঠকের অবশ্যই মনে পড়ে যাবে জীবনের হারানো পাতার মাঝে লুকিয়ে রাখা শুকনো গোলাপ প্রেম, খুঁজে পাবেন সেই প্রেম যে বেড়াতে এসেছে শুধু,থাকতে আসেনি।

 

 

 

বই        : প্রেমিকের বারোমাস্যা

কবি       : অভিজিৎ চক্রবর্তী

প্রকাশকাল    : ২০২০   

প্রকাশক     : যাপনকথা প্রকাশনী 

প্রচ্ছদ       : রাজদীপ পুরী

 

April 07, 2021

প্রচ্ছদ ৬

 


কবি বিমালেন্দু ভৌমিকের কাব্য গ্রন্থ ‘২-লাইনার’ (বসন্ত ,২০২০)

শ্রাবণসন্ধ্যা


 ১)

শ্রাবণের বিকেলগুলোয়

সুফি রঙের প্রেম

ছড়িয়ে পড়েছে শহরে

যদি সে চিনে তোমায়

ছোঁয়ার দরজায় কয়দিন

তুলে দাও মন-শেকল

ঘুমের বড়ি রেখো সঙ্গে

সারারাত দরবারী কানাড়া

তোমায় ঘুমোতে দেবে না।



২)

তোমার ধুলোমাখা যাপনরণে

যে নদী তেষ্টা মিটিয়েছে

তার জল ছুঁয়ে দেখোনি পথিক,

মুঠোয় ধরে পান করেছো আকণ্ঠ

 ভেবেছো আর্সেনিক পরিসংখ্যান।

ছুঁয়ে না দেখা জলের বিন্দুরা

অভিমানিনি হয়ে ঘুড়ে তোমার শহরে

আকাশে এঁকে যায় কিছু রাগি মেঘ।

 

আজ বৃষ্টি এলে একবার বাইরে এসো

দু'হাতে জল মাখো শরীরে

বলতে ভুলোনা –

আমি চিনেছি,আমি চিনেছি, আমি চিনেছি।


প্রকাশিত ত্রিপুরা, আগরতলার ওয়েবজিন 'দৈনিক বজ্রকন্ঠে' 
১) ১৭.০৯.২০১৮     ২)৩১.০১.২০১৯  

গল্পগাছা

@কমলিকা 

লামডিং নিয়ে কখনো আমি লেখিনি

লেখা হয়নি কলোনির রেল কোয়ার্টার

ও সেই ছোট্ট মেয়ের কথা

শহর ছেড়ে আসার সময়

মেয়েটিকে পুতুলের লোভে ডেকেছি

মরচে ধরা ট্রাঙ্কের ভেতর

কয়েদ করার ঠিক আগে

যত্নে হাত বুলিয়ে বলেছি

এখানে নিশ্চিন্তে ঘুমো,

মাঝে মাঝে খেলিস কিন্তু!

কোনোদিন সে জানতেই পারলো না

কানামাছি খেলার ফাঁকে

চারপাশটা অদ্ভুতভাবে গেছে বদলে

মেয়েটি আজ-ও  প্লাস্টিকের খেলো পেয়ালায়

ঘোলা জল ঢেলে চায়ের আসর সাজায়।


আগরতলা, ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত ওয়েবজিন 'দৈনিক বজ্রকন্ঠে' ১৯.০৭.২০১৮ রয়েছে এই কবিতাটি 

শব্দজাল

@কমলিকা 

 ১)

রাগাশ্রিত

আকাশী মরু শহরে
মেঘ বালুরাশি ঠেলে
নায়াগ্রা হয়ে দাঁড়ায়
সদ্য যৌবনা পূর্ণ চাঁদ
আশাবরী রাগে গাওয়া
এর থেকে সুন্দর স্থায়ী
আমার জানা নেই।


২)

এরাবীয়ান নাইটস

যে জোনাকি মাখা রাত
ক্লান্তির কাজল চোখ উপেক্ষায়
ঘুম , শুয়ে থাকতে জানে
বিছানার ব্যবহার না হওয়া অংশে
জানবে ঠিক সেইরাত
আমার স্বপ্নের আরব্য রজনী।

শুধু শব্দজালের মোহে যেখানে
মরণ অব্দি প্রেমিক হয়ে যায়।


৩)

ছুটি

 
রবিবার এলেই মনে হয়
এখন তোমার ফোন আসবে
অন্য মোবাইলে,অন্য রিংটোনে
অন্য নম্বর হলেও আশ্চর্য ভাবে
এক থেকে যায় মন ও মানুষ
 
আছি অবুঝ অপেক্ষা ছুঁয়ে
এখনই তোমার ফোন আসবে।

'দৈনিক বজ্রকন্ঠ' ওয়েবজিনে প্রকাশিত (আগরতলা, ত্রিপুরা)
১)২৮.০৬.২০১৮, ২)১৫.০৮.২০১৮, ৩)২১.১০.২০১৯ 
'রাগাশ্রিত' কবিতাটি শিলচরের ‘শব্দপাতার নৌকো’ নভেম্বর ২০১৮ -এ প্রকাশিত হয়। 


More to see...