December 08, 2021

ভালোবাসায় ডুবছে শহর

 

‘যতই আগুন জ্বলুক বুকে
আগুনই একা পুড়বে
হাসতে হাসতে কালো মেঘেরা    
বৃষ্টি হয়েই ঝরবে।’
 
বৃষ্টি বিন্দুরা জড়ো করে আনে ভালোবাসা, ঝরে পড়ে টুপটাপ শব্দে শহরের বুকে। এই প্রেম প্রকৃতির ককটেল উপভোগ করতে করতে- ভালোবাসায় ডুবছে শহর।   
 
‘ভালোবাসায় ডুবছে শহর’ মেঘমালা দে মহন্তের প্রথম কাব্য গ্রন্থ। যদিও মেঘমালা দে মহন্তর সাথে পাঠকের পরিচিতি একজন সফল গল্পকার হিসেবে। এবারে তিনি গল্প এঁকেছেন শব্দের ইঙ্গিতে নতুন আঙ্গিকে।
 
এই এক ফর্মার কাব্যগ্রন্থে রয়েছে ছাপান্নটি কবিতা। তবে এ কবিতাগুচ্ছ শুধু প্রেমের কবিতা নয়, অ-প্রেমের কবিতাও রয়েছে এই পনেরো পাতার মধ্যে।
 
তাই কখনো কবি লাজুক প্রেমিকা,  
 
‘হিসেব ভিজুক বেহিসেবি
পুড়ুক অঙ্ক দারুন জ্বরে
ছোট্ট একটা বৃষ্টি নামুক
নয়-জীবন জ্যামিতি ঘরে।’
 
    কখনো আবার রাত জাগা বিরহিণী,
 
‘ভাঁজ করা রাত-শাড়ি
পাট ভাঙে প্রহরে প্রহরে,
আর কত রানি হারায়
অতন্দ্র রাজপাট।’
 
    কবি মেঘমালার অস্তিত্বে কখনো ঢুকে পড়েছে গল্পকার মেঘমালার হাতছানি। কবি পাঠকের দু’চোখে বুনে দিয়ে যায় সাজানো দৃশ্যপট।
 
‘শীতের শব পড়ছে ঢাকা বসন্ত চাদরে
চাষী তুই আগলে রাখিস সোনালী উগার।’
 
‘অসহ্য সব জাগিয়ে রাখার আয়োজনে
বহুদিনের অতন্দ্র রাতটা কেঁদে ওঠে-
‘নাকছাবিটা হারিয়ে গেছে হলুদ সর্ষে বনে’ ’
 
কবি তাঁর চারপাশের দেখা প্রকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোজনামচার খেলাগুলোকে তার কাব্যলিপিতে তুলে ধরেছেন। তাই বারে বারে কবিতায় ভেসে এসেছে কখনো কাল মেঘ, কখনো তারা ভরা  আকাশ। আর, তার মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এক বৃক্ষ জীবন।
 
‘ধূলো-পা-জীবন সবুজে ঘুমাক
এপিটাফে এইটুকুই থাক।’
 
    এই কাব্যগ্রন্থের ছাপান্ন কবিতার কোন নাম নেই, নেই কোন ভাগ। সেই কারণেই কখনো একটা অগোছালো ছাপ পরিলক্ষিত হয়। রিফিউজি বা দেশপ্রেমের উল্লেখ যেন হঠাৎ করে এসে দাঁড়ায় স্বপনমেদুর কাব্যে। এক কবিতা থেকে আরেক কবিতায় হেঁটে যাওয়ার পথে তাই পাঠককে মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াতে হয়। কবির পরবর্তী কাব্যগ্রন্থে তিনি নিশ্চয়ই এই পথ আরও মসৃণ করে দিবেন, আশা রাখি। প্রচ্ছদে লাল রঙের বেলুনটি ও হলুদ তীর  একটু চোখে লাগে, বিশেষত যখন বইটি টীন-এজ লাভ নিয়ে একেবারেই নয়।
 
    ‘ভালোবাসায় ডুবছে শহর’ – এক একান্ত দিন যাপনের কথা। কবি এখানে তার ভাবনাগুলো সাজিয়ে রেখেছেন পররম মমতায়। কিছু আবেগ, কিছু সুক্ষ মুহূর্ত যা রোজের জীবনে হয়তো হারিয়ে যায়, তাকেই তুলে এনেছেন এই দু’মলাটের মধ্যে। পাঠকের এই লেখার মধ্যে খুঁজে পাবেন মনের এলোমেলো চিন্তা কণাগুলো, আর এই কবিতাগুলো হয়ে ওঠে যেন আমাদেরই মনের কথা।
 
‘সারি সারি কিছু ঘুমন্ত মানুষ
কেউ জানেনি লোহার ব্যথা।
 
জেগে আছি আমি আর আমার দুরন্ত ট্রেন।’
 
    এই দুরন্ত ট্রেন পাঠক নিজের অজান্তেই উঠে পড়ে কামরায়, হারিয়ে যায় উইন্ডো সীটের ওই সবুজ মেঠো পথে কবির হতে হাত রেখে। ঠিক সেই সময় ভালোবাসা ঝরে পড়ে আকাশ থেকে। এখন শুধু শহরের সাথে পাঠকের ভালোবাসায় ডুবে যাওয়ার পালা।
 
 
বই              : ভালোবাসায় ডুবছে শহর
লেখিকা      : মেঘমালা দে মহন্ত
প্রকাশকাল : ২০২০   
প্রকাশক     : যাপনকথা প্রকাশনী 
প্রচ্ছদ         : রাজদীপ পুরী

August 22, 2021

ডায়েরীর পাতা থেকে

@কমলিকা 

১)

'বিদায় ভালোবাসা,দেখা হবে অন্য জীবনে'- এই বলে যে ছেলেটি কফিশপ ছেড়ে গেল, তার চলে যাওয়ার কথা আমি আগেই জানি। ডি.এন.এর চৌত্রিশ তম ক্রোমোজোমে গাঁথা আছে চলে যাওয়ার এই মন্ত্র। এভাবেই ছেলেটির বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন একদিন,ড়ে ছিল কিছু এলোমেলো কবিতা। শুনেছি, তার মা কবিতাগুলো পড়তে পারেনি, সাহস করে,এই জীবনে। মায়ের মৃত্যুর পর কাঁপা হাতে সেই কবিতা তুলে দিয়েছিল আমাকে। সেই থেকে কবিতারা সেই কাপবোর্ডে বানিয়েছে ঘর। আজ মনে হচ্ছে একবার পরে নিলে অনেক কিছুই আটকে ফেলা যেত। অথচ, কবিতারা যে এখন সেখানে আর নেই,সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তাই আরেক কাপ কাপুচিনো বলেছি।কবিতা হয়ে ওঠার চেষ্টা আজ থেকেই শুরু করতে হবে।

 

২)

কিছু গান তার আঁচলের খুঁটে রাখে বেঁধে মন দরজার চাবিগোছা। এইমাত্র চাবি ঘুরিয়ে এক প্রেমিক গান ঢুকে পড়ল অন্দরে। স্মৃতির শহরে সে এক নতুন ট্রাভেলার,তুমি তার একমাত্র পরিচিত।হন্য হয়ে সে খোঁজে তোমার পেস্টেল রংয়ের বাড়ি।অচেনা গলি পার করে বাড়ির ঠিক সামনের লনে পা রাখতে গানটি টের পায় বাজছে তার লাস্ট মিউজিক নোট।স্তব্ধতার ঠিক আগের মুহূর্তে সে রেখে যায় কিছু বেলফুল সুবাস মাখা এক রিপ্লে বটন প্রতীক্ষা।

 

দৈনিক বজ্রকন্ঠ' ওয়েবজিনে প্রকাশিত (আগরতলা, ত্রিপুরা)

১)০৪.০৭.২০২১, ২)২৩.০৭.২০২১

July 24, 2021

বিসর্জন

@কমলিকা 

 দশমীর ডুবো রোদ গায়ে মেখে

নামহীন এক পুকুরপাড়ে আমি,

জানি একটু পরেই তুমি আসবে

আওয়াজ ও আলো-লাল নীল।

হাত ধরে নেমে আসবে দেবী-

এক, দুই, তিন সিঁড়ি গুনে

তোমার ইশারায় নামতে নামতে

গায়ে মাখা সব আগুনপালক

মিশে যাবে জল বিন্দু হয়ে,

তোমার বিশ্বাস মাখা স্পর্শ ছাড়া

কাঠামোর আর কিছুই জানা হবে না।

 

ঠিক তখনই জল ওঠে নড়ে,

নড়ে ওঠে আমার গচ্ছিত দেবীভাব।

 

আগরতলা, ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত ‘কীর্ণকাল’ পত্রিকায় রয়েছে এই কবিতাটি (৪র্থ বর্ষ, ২০২০)

স্বপ্নতরু

@কমলিকা 

মাঝে মাঝেই আমি গাছ হয়ে যাই

শেকড় গেঁথে যায় নরম ম্যাট্রেসে,

বেডরুমের হালকা নীল আলোয়

স্পষ্ট দেখি ঝরে পড়া বুনো ফুল;

তুমি সে নামবিহীন ফুল তোলো-

যত্নে সাজাও সজল কাঁচের পাত্র,

ঘর ভরে যায় অচেনা মিষ্টি সুবাসে

আমাদের বাসর সাজে প্রতিরাতে।

 

ফুলের গন্ধে আমার মনখারাপ হয়,

তুমি তো তা জানতে,জানতে না?

 

কবিতাটি প্রকাশিত হয় আগরতলা, ত্রিপুরার ‘কীর্ণকাল’ পত্রিকায় ৪র্থ বর্ষ, ২০২০


গল্পবিজ্ঞান

@ কমলিকা 

 

পৃথিবী তোমাকে নিজের দিকে টানছে,

সূর্যর অমোঘ চুম্বক টানে পৃথিবীকে।

এই আকর্ষণ ভুলে তুমি ভাবছো

বাসস্টপে দেখা মেয়েটির কালো চোখ।

 

তোমার হারিয়ে যাওয়া কক্ষপথে

এখন লাল চাদর রয়েছে বিছানো,

শুধু সময়ের হাত ধরো একবার

হারিয়ে যাও নিজের গতিমতো।

 

জানবে,সূত্রেরা গন্তব্যে না পৌঁছলে

বিজ্ঞানের খাতা কখনো শেষ হয় না।

 


কবিতাটি প্রকাশিত হয় প:বঙ্গ জলপাইগুড়ির ‘দুন্দুভি’ সাহিত্য পত্রিকায় (নভেম্বর, ২০২০)


June 05, 2021

রঙ তুলি

 

‘দৈনিক বজ্রকন্ঠ’ ওয়েবজিনে ২৯.০৫.২০২১ তারিখে প্রকাশিত (আগরতলা, ত্রিপুরা)

পুরাতাত্ত্বিক

 



কবিতাটি প্রকাশিত হয় অসমের তিনসুকিয়ায় ‘উজান’ পত্রিকায় (ষোড়শ সংখ্যা, ২০২০)


কথায় কবিতায়

 


‘দৈনিক বজ্রকন্ঠ’ ওয়েবজিনে ০৭.০৪.২০২১ তারিখে প্রকাশিত (আগরতলা, ত্রিপুরা)

May 30, 2021

স্বীকার-অস্বীকারের কাব্যকথা

@কমলিকা 

 

‘কনফেশন’ বা স্বীকারক্তি কথাটা মাথায় এলেই চোখে প্রথম ভেসে ওঠে গির্জার ভেতর বন্ধ ঘরে বসা এক মানুষ। তিনি মন ও মগজের সকল দ্বন্দ -দ্বিধা এক করে বলে চলেছেন অকপটে সকল সত্য কথা। মেলে ধরছেন সব অপরাধ বোধ যতনে এক এক করে। বন্ধ ঘরের  লাগোয়া  ঘরে সে কথা বসে একমনে শুনে চলেছেন এক পাদ্রী। শ্বেত শুভ্র বসন,হতে ক্রস ও রোজারি। সকল কথার পর পাদ্রী সাহেব যীশুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ভিক্ষা করেন। ওপারের অচেনা মানুষটিকে আদেশ করেন ভবিষ্যত কলুসমুক্ত রাখতে। এর পর যে যার কাজে বেড়িয়ে যায়। ব্যস ,এই টুকুনই গল্প।

এ দৃশ্য যতবার ফিল্মের পর্দা অথবা বইয়ে উঠে এসেছে,ততবার ভেবেছি – বাহ্, কি সহজ সরল উপায় মনের ভাব লাঘব করার। কোন থানা-পুলিশ, লোক-লজ্জা কিছুই নেই। তবে এই দৃশ্যটি আগের দিনেই দেখা যেত। আজকাল কনফেশন বক্সের কথা প্রায়ে চোখেই পরে না। হয়তো মানুষ এখন নিজের মনের কথা নিজেকেই স্বীকার করতে ভয় পায়। নিজের সৃষ্ট তোরঙ্গে তাই তলাচবী দিয়ে রাখে সকল দুঃখ, হতাশা, পাপবোধ।

সেই বক্সের অকপট স্বীকারক্তির সুত্র থেকেই আমেরিকায় ১৯৫০ এবং ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এক ধরনের কবিতার চল হয়, যার নাম কনফেশনাল পোয়েট্রি বা কনফেশনালিসম্। বিখ্যাত কবি রবার্ট লয়েল, সিলভীয়া প্ল্যাথ , এনি সেক্সটন, জন বেরীমোর, এবং অন্যান্য সেই সময় লিখে গেছেন একেরপর এক সব অসাধারণ কনফেশনাল পোয়েট্রি।  সিলভীয়া প্ল্যাথের বিখ্যাত কবিতা ‘ড্যাডি’ কনফেশনাল পোয়েট্রির এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।

‘… If I’ve killed one man, I’ve killed two –

The vampire who said he was you

And drank my blood for a year,

Seven years, if you want to know

Daddy, you can lie back now …’

 

এ কবিতার প্রতিশব্দে তাঁর অকাল পিতৃবিয়োগ, পিতার প্রতি ঘৃণা ও তার পরবর্তী বিভীষিকাময় জীবন ফুটে ওঠে।

কনফেশনাল পোয়েট্রিকে বলা হয় আমি-র কবিতা। এখানে কবি নিজেকে ও নিজের হতাশা, উপলব্ধি, দুর্ভোগ আঁকে শব্দ তুলির ছোঁয়ায়। তবে এই লুকানো  দরজার কথাগুলোর মধ্যে কিন্তু কবি তার চতুরতার ও বাগ্মিতার পরিচয় রেখে সাজিয়ে যায় এক অক্ষরের মায়াজাল, কবির একেবারে নিজের মনের কথা তাই হয়ে উঠে পাঠকের মনের গভীর সংকেত।  

যে স্টাইলটি বিদেশ একসময় নাড়িয়ে দেয়, অবাক ভাবে ভারতে তার তেমন ছায়া নেই বললেই চলে। একমাত্র কবি কমলা  দাস  কে বাদ দিলে আর কোনো কবিকেই আলাদা ভাবে কনফেশন পোয়েট আমরা পাইনি। কোমল দাসের ‘গ্লাস’ কবিতা তার জীবনে বিভিন্ন পরকীয়া সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে –

… I enter others

Lives, and

Make of every trap of lust

A temporary home.’

 

সে ভাবে দেখতে গেলে বাংলা ভাষায় কনফেশনাল পোয়েট্রি আলাদা কোনো জায়গা করতে পারে নি, তবে এই কথাও অস্বীকার করা যায় না – রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে। কবিতায় কবি তার সত্তা মিশিয়ে দেয় নিজের অজান্তেই।  তাই, কখনো কখনো সেখানে ধরে পড়ে মনের গভীরে লুকিয়ে থাক কথা। যেমন কাজী নজরুল লিখেছেন তার সর্বহারা জীবন নিয়ে –

‘ ...বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম,প্রেম পেতে এসেছিলাম। সেই প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নিরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।...’(যদি বাঁশি আর না বাজে)

উত্তরপূর্বের কাব্যভুবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে দেশহীনের যন্ত্রনা। নিজের বাসভূমিতে জারজ অস্তিতের কথা ফুটে ওঠে বহু কলমে। কিন্তু সেই কবিতগুলোয় সার্বজনীন দুঃখ পরিলক্ষিত হয়, অথবা কোনো কাল্পনিক (আদৌ কাল্পনিক নয়) রূপকের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

এই দুঃখের জয়গাটাতেই আমরা কনফেশনাল পোয়েট্রির হাত ধরতে পারি। নিজেদের অভিজ্ঞতা, চাওয়া-পাওয়ার ফারাক, স্বপ্ন ও বাস্তব জগত কে এক করে লিখতে পারি ‘ আমি- র’ কবিতা,  ‘আমার’ কবিতা, ‘আমাদের’কবিতা। কিছু দিন আগে মিয়া কবিতার বহুল প্রচার সে দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, কিন্তু ইঙ্গিত আর বাস্তবায়িত হয় নি। এখন সময় শুধু অপেক্ষার।

 কনফেশনাল পোয়েট্রি কোথাও কোথাও নিন্দিত হয়েছে ‘নারসসিসম’-এর দায়। নিজের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা ও বাকি সকলকে উপেক্ষা করা- এই বিষয়টি সমাজ সে ভাবে মেনে নিতে পারেনি। আর তাই হয়তো এর আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে কোনো এক গোপন চেম্বারে থেকে গেছে এক নিস্তব্ধ প্রদীপ হয়ে। হয়তো ভবিষ্যতের কোনো এক পথিক এসে এর সলতে একটু উসকে  দিয়ে যাবে, আমরা থাকবো সেই প্রতীক্ষায়।


প্রকাশিত হয় অন্তঃকরণ পত্রিকার ৬ষ্ঠ সংখ্যায়, ফেব্রুয়ারী ২০২১ (আগরতলা, ত্রিপুরা)

May 16, 2021

সহজপাঠ

কমলিকা 


 

যুদ্ধ শেষে সৈন্য শহর ছাড়লে

ছেলে মেয়ে যাবে ফিরে ইস্কুলে,

তুলবে খাতা,শিখবে সহজপাঠ

 ''-এ অস্ত্র, '' -এ আতংক।

 

কিছু দীর্ঘশ্বাস গলে পড়বে শুধু

পোড়া মোমে শেষ আলোরেখা হয়ে।




দৈনিক বজ্রকন্ঠে প্রকাশিত ১৯.০৯ .২০২০ (আগরতলা, ত্রিপুরা)

ত্রিষ্টুপ

@কমলিকা 

 
১) কন্সোল্যাশন প্রাইজ

শুধু এক সান্ধ্য উৎসবের
সাজানো ট্রফি লোভে
যে রক্তগোলাপ হত্যা
নিজহাতে করেছি রচনা
এতবছর পর আজও সে
বই কফিনে উঁকি মেরে
গায় আমার সমূহ ব্যর্থতা।


২)সাদা কালো

এক মেয়ের গল্প বলি
মাতাল আত্মঘাতী স্বামীর
মরদেহ চেয়ে যে বলেছিল
এতদিন (সব) জ্বালা জুড়ালো।
চিতাকাঠের ধোওয়া মেখে
বারোহাতি বৈধব্য সাজে
সরকারি অফিসে লিখিয়েছিলো নাম।

অনেক পরে জেনেছিলাম
সাদা শাড়ি পরিহিতা
একদিনশুধু ভালোবেসে ছেড়েছিল ঘর
সেই থেকে কত প্রেম রঙ
মিশলো এসে শাড়ির খাঁজে
বোকা শাড়িখানার তবু
রঙিন হয়ে ওঠা হলো না।

৩) বৃষ্টি তোমাকে দিলাম

তোমার কথা মনে এলে
সেদিন শহরে বৃষ্টি নামে,
ভালোবাসায় যায় ছুঁয়ে
এক মেঘ থেকে আরেক মেঘের বুক;
কল্পনা-কার্নিশে জমা কথাদের
কাজে আর থাকে না মন
ব্যস্ত হাতে বানায় অরিগ্যামি নৌকা,
দু' একটায় পাল দিতেও ভুলে না।

তোমার কথা মনে এলে
আমি নৌকাদের ভিজতে দেই না,
পাট করে তোষকের নীচে রেখে
শুয়ে শুয়ে মেঘেদের গান শুনি।


'দৈনিক বজ্রকন্ঠ' ওয়েবজিনে প্রকাশিত (আগরতলা, ত্রিপুরা)
১)৩১.০১.২০১৯ , ২)৩০.০৩.২০১৯ , ৩)২৬.০৩.২০২০  



সময় অসময়

@কমলিকা 

এখন একা থাকার এক বিবর্ণ সময়

শত্রুর ঘায়ে দরজায় পড়েছে ডাবল লক,

মানুষ একলাই ছিল এই জীবনে চিরকাল,

সবাই জানে,তুমিও জানো সঠিক।

 

একদিন সূর্য উঠলে দেখো চেয়ে

ড্যান্ডেলিওন ফুলে সেজে আছে শহর,

প্রতিটি বন্ধ দরজার ধুলো মাখা ফাঁকে-

আমাদের মনের যা কিছু ভালো

হয়ে উঠবে এক একটি সফেদ রেনু।

 

অপেক্ষায় থেকো সে সময়ের,

গাছে জল দিও দুবেলা,যত্ন মেখে

বসন্ত ঋতুচক্রের শেষে ফিরে আসে,

সবাই জানে,তুমিও জানো সঠিক।


দৈনিক বজ্রকন্ঠে প্রকাশিত ১৭.০৫.২০২০ (আগরতলা, ত্রিপুরা)

সেল্ফি কথা

@কমলিকা 

আধঘন্টা আগে অনলাইনে যে ছবি

সাজিয়েছি,জানি সে হেঁটে চলেছে

তোমার মোবাইলের প্রযুক্তি গলি,

নতুন নাম এখন দুশো পঁয়ত্রিশ।

 

রাত ঘুমিয়ে পড়লে সেই জমে থাকা

ছবিগুলো ভাঙে তার চেনা চৌকাঠ,

একে একে দাঁড়ায় বিছানার চারপাশে।

 

তুমি তো জানো না ঘুমন্ত প্রহরী,

আমারও মুঠোয় আছে এক লকার।

 

সেল্ফিরা বলবে ভালোবাসি -অপেক্ষায় আছি।



আগরতলা, ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত হয় 'বজ্রকণ্ঠ' ওয়েবজিনে (১৪.০৬.২০২০)

ছায়া শরীর

@ কমলিকা 

 ১)

ঘুম হারা রাতে যে ছায়াশরীর
জড়ো করেছে জোছনা ফুল,
নরম আলোয় জ্বলতে দেখেছি
ঘাড়ের পাশে এক মিশকালো তিল।
অথচ এ রাত শুধু আমার ছিল,
ছিল ওই তিল আঁকা মায়াবী শরীর,
ছিল মুঠোয় ভরা ফুল পরশ।
এত আলো দূরে ফেলে রেখে আজ
বলতে পারো কেন দাঁড়িয়ে আছি
ওয়ালর‍্যাকে রাখা বাহারি মুহূর্ত হয়ে?


২)

যেই আল্ট্রা মেরুন হাই হিল
অবহেলায় পার করেছে পথ,
জানবে সে তোমার ছায়াশরীর।
এইভাবেই কতো অজানা বসন্তে
ঢেলে দিয়েছো শরীর মাখা আগুন,
ফরেস্ট ছুঁয়ে ক্রিমসন তুলিটান
 
পথিক,তুমি যে আগুনের রঙ চেনো,
সে তার প্রকৃত গঠন জেনে ফেলেছে।
হাতে গোনা বাসন্তী পলাশের পর
দেখবে, সে একদিন তুমি হয়ে যাবে,
তাকিয়ে দেখবে তোমার-ই দুচোখে
অন্য এক সদ্যকিশোরী ছায়াশরীর।



প্রকাশিত ত্রিপুরা, আগরতলার ওয়েবজিন 'দৈনিক বজ্রকন্ঠে' 
১) ১১/০২/২০২০      ২)১২/০৮/২০২০  

বাজার

 



ওয়েবজিন 'কবিতা করিডোর' থেকে ৩০.১১.২০১৯ এ প্রকাশিত (আলিপুরদুয়ার, বাংলা)। 
ওয়েবজিন 'বজ্রকন্ঠ' থেকে ২৬.১০.২০১৯ এ প্রকাশিত  (আগরতলা, ত্রিপুরা)। 

April 15, 2021

রনো ও আমি

@ কমলিকা

 ১)

নির্ভীক প্রেমে বুকের পাটা দরকার;

আমার রিব-কেজ গড়া সকল মাটি

রনো নিজ হাতে শাবল চালিয়েছে

 কোটর মাঝে রেখে গেছে

কিছু উডরোজ ও অক্ষরজাল,

 এখন আমি শুধু লুকিয়ে দেখি

সুদীর্ঘ কালো শঙ্খচূড়ের মতো নিশ্বাস

 দেখি আর বসে থাকি অপেক্ষায়

এক অশান্ত শ্রাবণ বৈশাখীর-

মানুষভর্তি রাস্তায় বেরিয়ে পড়বো একা

শহরের পাথুরে মাটি লেপবো বুকে

নতুন সফেদ হাড় গজাবার মন্ত্র

লিখে রেখে যাবো আরেক পাঁজর কোঠায়।



২)

চোখে বেখেয়ালে সাজিয়েছি

দুফোঁটা টলটলে গ্লিসারীন

সকল নায়িকারা সেটাই মাখে

দুঃখী শটের ঠিক আগে

এ খবর লেখা আছে

কোনো এক সিনেমার চটুল পাতায়;

যে বান আজ নেমে এলো

দেখি সে অতি সাধারণ

তাকে অশ্রু ডাকা মানায় না

ইমোশনের বড় অভাব

 কাঠ মার্কা শহুরে বাবুর মতো,

অথচ,আমার রাত জাগা গল্প জানে

তুমি এলেই চোখে আসে জল

সামনের পটে জমে ওঠে ভাপ

তোমায় দেখতে ইচ্ছে হয় রনো

তুমি কি সেই খাঁটি গ্লিসারীন

আর বাজার চলতি যা কিছু

পুরোটাই বাতিল,পুরোটাই ভেজাল?

রনোঅনেক রাত হলো

এবারে চোখে এস নেমে

কবে থেকে ক্যামেরা রোল হচ্ছে

এবার আমি শেষ শট দেবো।


প্রকাশিত ত্রিপুরা, আগরতলার ওয়েবজিন 'দৈনিক বজ্রকন্ঠে' 
১) ২৭/০৬/২০১৯     ২)১৬/০৯/২০১৯ 

প্রথম কবিতাটি ২১/১০/২০১৯ এ আলিপুরদুয়ার থেকে প্রকাশিত ওয়েবজিন 'কবিতা করিডোর'-এ ও স্থান পায়।  


More to see...