‘এখন
অন্ধকার চারিদিক
অথচ কিছু
আগেও কলরব ছিল এই পথে
সকালের
স্নিগ্ধ আলো পড়েছিল
ধূলি আলপনার উপর...’
এই নিগূঢ় অন্ধকার মনের প্যালেটে কথার ভীড় আঁকে, সেই কথারাই তো সাজে কবিতার মেঘ। মেঘেরা এসে আসর জমায় কবির জানলার কাঁচ ঘেঁষে। জন্ম নেয় ‘পোয়েটিক জানলায় কবিতার-মেঘ’। কবি নীলদীপ চক্রবর্তী তাঁর এই দু’মলাটের কবিতার বই জুড়ে পাঠকদের শুনিয়েছেন সেই সব মেঘেদের ফিসফাস কথা।
এই বইয়ের কবিতারা মনের কথা বলে। যে কথাদের সাজানো অলংকার চাই না সৌন্দর্যের খাতিরে। এ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তারাও হয়ে উঠেছে ঝকঝকে স্মার্ট।
‘প্রতি
সন্ধ্যায় অর্ধেক চাঁদ নামে
নির্মীয়মান
ফ্ল্যাট বাড়ির জলের পাইপ ধরে,
এর ঠিক
বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি...’
‘এখনো
তোর অট্টালিকার রঙিন ডিস্টেম্পার
দেওয়ালের
বদলে আকাশ, কালো জানলায়।’
মানব মনের বিচরণ বড় অদ্ভুত। কি নেই সেখানে ! যৌবন
– কৈশোর, প্রেম- বিরহ, জীবন- মৃত্যু, সব রঙের ককটেল। সেই ককটেলটি সুদৃঢ় কাঁচের গ্লাসে
পরিবেশন করেছেন কবি।
‘প্রেম,
তুমি কি রেলগাড়ি হতে পার,
ছোট্ট
ছেলের কল্পনারই লোকে?’
‘হে
যক্ষ, হে মেঘ, হে প্রেম
যত
মৃত্যু সব
শেষবার
জীবন হয়ে যাক।’
জীবন মানে শুধুই স্বপ্নসুখ নয়, জীবন মানে ঘোরতর বাস্তব ও তার চাওয়া পাওয়া।
তাই কবির কলমে উঠে এসেছে কিছু খুঁজে বেড়ানো প্রশ্ন, কিছু না পাওয়া ইচ্ছেকুচি। কবিমন
বার বার আঘাত হানে পাঠকের চেতনায়। বলে ওঠেন-
‘কোন
অগ্নি, কোন বন্যা, কে ভাষায়
কে পোড়ায়
– ভাষা মায়ের মৃত শরীর?’
‘বোবা
কান্না মূল থেকে গভীর ধ্বনিতে
কন্ঠে
যে ঈশ্বর আছেন নির্বাক বধির’
জীবন যাপনের খবর জানাতে কবি শোনায়-
‘আমরা
কাটি পুরোনো কাস্তে দিয়ে
হেলে
দুলে পড়া কালো কালো যহ ধান
আমরা
কাটি দিন, কাটি রাত্রি-নিদ্রাহীন।’
‘পোয়েটিক জানলায় কবিতার-মেঘ’এর প্রচ্ছদটি যেমন
জানলার গ্রীল জুড়ে দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশের জানান দেয়, এই বইটির কবিতাতেও উঠে এসেছে
বিভিন্ন আঙ্গিক, বিভিন্ন রঙ, বিভিন্ন অভিব্যক্তি।উঠে এসেছে স্বপ্ন বিহার-
‘অষ্টমীর
স্নানের মোহনায় ফুটে থাকে
বসন্ত
কিশোরীর পদচিহ্ন।’
উঠে এসেছে কঠিন বাস্তব-
‘কারেংএর
বিধৃত উপত্যকায় একা দাঁড়িয়েছে আহোম যুবক
ওর হেংদাং
নিথর শুয়েছে খাপে...’
পাঠক শুধু তুলে নেবে হাতে এবার, দু’চোখ ভরে দেখবে
রামধনু- এক মেঘাচ্ছন্ন আকাশের বুকে।
বই : পোয়েটিক জানলায় কবিতার-মেঘ
লেখক : নীলদীপ চক্রবর্তী
প্রকাশকাল
: ২০১৯
প্রকাশক
: নান্দীমুখ প্রকাশনী
প্রচ্ছদ
: পুষ্পল দেব
সুন্দর! লিখতে থাকুন৷ কারেংএর হবে না, কারেঙের হবে৷ কবিও যদি লিখেছেন ভুলটা ঠিক করা চাই৷
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ দাদা। আমি সত্যি কবির লেখাটাই তুলে দিয়েছি।
Deleteঠিক আলোচনা নয়, পাঠকদের একটা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দানের চেষ্টা মনে হলো। ভালো প্রয়াস। উদ্ধৃত কবিতাংশগুলো চমৎকার। তবে কবির কাব্যগ্রন্থ যেহেতু পড়া হয়নি তাই ওই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। আর সামান্য বক্তব্য থেকে ধারণা করা অনেকসময় হতে পারে আত্মঘাতী । রও বেশি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteসত্যি তাই, এ নিজের পড়া সকলের মাঝে একটু ভাগ করে নেওয়া।
Delete*আরও
ReplyDelete