আগরতলা, ত্রিপুরা থেকে 'এবং উমিয়াম' ওয়েবজিনে ৩০.০৫.২০২০ প্রকাশিত
প্রতিটি দেবীর
থাকে@কমলিকা
এক প্রেমিক অসুর
শুধু বিয়ের আশায়
যে বানায় মন্দির
প্রেম কারুকাজ গাঁথা
বানায় সুদৃঢ় রাস্তা
দেবীকে পপুলার করার
এক প্রণয় বাসনায়।
রাত নিঃশেষ হয়
এক অসমাপ্ত চারুকলা
ও মোরগের ছলনায়
প্রেমিক জানতেই পারে না
বিবাহ নামক অস্ত্রে
রমণীরাও যথেষ্ট পটু।
দৈনিক বজ্রকন্ঠে প্রকাশিত ৩১.০৫.২০১৮ (আগরতলা, ত্রিপুরা)
@কমলিকা |
তোমার সেই পরিচিত
ডবকার
মেয়েটি আর
এক্কা
দোক্কা খেলে না
পাঠশালার
ধুলো মাখা
খিলঞ্জীয়া
খাতায়
খোঁজে বাক্স প্যাটরার নাম
ঘুন
কাটা ডেস্কের কাছে
সে ফেলে
এসেছে বর্ণপরিচয়
ভাষা
জাতির চৌখুপি খেলায়
টিপ
করে ছোঁড়ে পাথর
তোমার
সেই পরিচিত
ডবকার
মেয়েটি আর
ঈশ্বরচন্দ্র
জানতে চায় না।
দৈনিক বজ্রকন্ঠে প্রকাশিত ১৯.০২.২০১৮ (আগরতলা, ত্রিপুরা)
১) শহরকে, ভালোবেসে
@কমলিকা |
শীত
আসছে তার শান্ত পায়ে
শহরের
বুকে বাজে সে ধ্বনি
এ সময়
পরিযায়ী পাখি ওড়ে
হয়ে
ওঠে সেই দূর দ্বীপবাসিনী
এবারেও
তার অন্যথা হচ্ছে না
বুঝতে
পারছি আমার এবারে
পাখা
মেলার হয়েছে সময়
অথচ
পাখার নরম পালক
মায়া
কুয়াশাভারে আছে ক্লান্ত
স্পষ্ট
দেখছি দুটো পায়ে
রোজ
বেড়ে চলেছে শেওলা
ঘন
সবুজে ঢাকছে বিভবশক্তি
কেন
বুঝতে পারিনি এতকাল
শুধু
শহরকে ভালোবেসেই
প্রাণ
দিয়েছিলো গল্পের সোয়ালো পাখি।
২)কাতিউশার গল্প
এ শহরে
শীত এলেই
কুয়াশারা
আসে নেমে
রাস্তার
কাজল চোখ কোণে
যেন
স্বর্গের পবিত্র পরীরা
শহরের
বুকে ছোঁয়ায় আঙ্গুল
অদৃশ্য
হয়ে যত রৌদ্রক্ষত
ধূলোচাকার
রেখে যাওয়া দাগ
সাদা
কালো বেহায়া বেড়ালগুলো
জানলার
কার্নিশে করে অভিনয়
ঘুম চোখের ফাঁকে দেখে রাখে
চৈত্র
এলেই উন্মুখ মন
কান
পাতে ঢাকের খোঁজে
সেই
ছোট্ট বেলার পাড়াগাঁয়ে
হরগৌরীর
চক্রাকার নাচ
আগে
নীলমাখা শিব
পেছনে
পীতবর্ণা পাব্বতী
বেকার
ছেলের মাসকাবারি
ফাউ
হিসেবে ভক্তি প্রণাম
ভগবান
হয়ে ওঠা গল্পকথার
এক্সপাইরি
গাজন মেলা
রাতে
সারপ্রাইজ এলিমেন্ট
আলকাতরা
সাজে কালী।
সেই
চড়া কমদামি রঙ
চারিদিকে
পড়েছে ছড়িয়ে
সাজঘরের
ফাঁকা কৌটো
হাতে ধরে
আজ ও থাকে বসে
যুগ
অচল বহুরূপীরা।
যে কবিতা লিখবো বলে কলম ধরেছি
@কমলিকা |
জানি লেখা হয়ে
গেছে বহুবছর আগে।
সেখানে দাঁড়িয়ে
এক মধ্যবয়সী যুবক,
হাতে তাঁর
রক্তস্নাত কাঁটাতার গুচ্ছ
(এই অব্দি পড়েই
যাঁরা ভাবছেন যীশু
ও সেই বহুল
পরিচিত ক্রুসিফিকশন;
জনান্তিকে
জানাই,ভুল ভেবেছেন)
যুবকের দিকে
আলো ফেলা হোক
ডি এন এ টেস্ট
ছাড়াই বলা যায়,
চেনা যায় নিজের
পূর্ব জন্মের মুখ।
কাঁটাতার ধরা
শান্ত হাত এগিয়ে আসে
সফেদ কাগজে
ছোঁয়ায় লাল আঙ্গুল,
আরো অনেক অনেক
টিপ ছাপ আঁকা
সেই লাল কাগজই
আসলে কবিতা।
প্রথমে অবশ্য
সঠিক বোঝা যায় না
সাধারণ ভোটের
স্লিপ ভেবে হয় ভুল
নেহরুর পক্ষে
বা বিপক্ষে কত ভোট
এই নিয়ে টেবিল
সরগরম করা যায়,
ক্ষত চিহ্ন তখন
ধীরে ধীরে মেলে চোখ
হয়ে ওঠে একেকটা
রাগী বর্ণমালা
ঠিক তখনই এ
কবিতা লেখা হয়,
বলে যায়,মাতৃসুধা ঘুরে শরীর শিরায়
নিয়ে এসো কাগজ,নিয়ে এসো কাঁটাতার
নতুন আঙ্গুল চিহ্ন সাজাবো এবার ।
১৪.১০.২০১৮ এ দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে প্রকাশিত। (গুয়াহাটি,অসম)
১) সোহাগ-বন্দর
@কমলিকা |
ঠোঁট তার সোহাগি ঝড় শেষে
ছড়িয়েছে এখন মৌন প্রশান্তি
সমুদ্রের নীলাভ জল মাঝে
জাহাজ মাস্তুল গেছে টুটে কবে
দিগ্ ভ্রষ্ট নাবিক আমি অপেক্ষায়
ময়ূরপঙ্খীর দেখা মেলে যদি
পাবো তবে
মাটির দৃপ্ত পুনরঘ্রাণ
বন্দরে বলবো আমি সিন্দবাদ।
২) নেশা
যে ধোঁয়া ওঠা চায়ের পেয়ালা
তোমার কবোষ্ণ ঠোঁট ছোঁবে বলে
অপেক্ষায় থাকে শ্রাবণ বিকেল
সেও জেনে ফেলেছে সত্যটা
তোমার নেশা কতটা গভীর খাদ
শুধু তলিয়ে গিয়েই বাঁচা সম্ভব।
৩) সোনাফুল
যে রাস্তায় আমি চলি
তার শরীর ভরে আজ
নতুন সোনাফুল অলঙ্কার
তোমার লিপি অভিসার অঙ্গে
কবিতা চন্দন সাজ
সে কি এতটাই সুন্দর
ছুঁয়ে দেখবে না একবার, প্রেম?
৪) ক্যাপুচিনো
আজকাল আয়নার দিকে
প্রায়েই চেয়ে থাকি আমি
অথবা আয়না আমাকে
দু’জনের খঞ্জ ছলে অবিরাম
আয়নারও একটা কফিশপ দরকার
দরকার এক পুরনো আরশিবন্ধু ।
সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ২৮.০১.২০১৮ এ (শিলচর,অসম)
@কমলিকা |
এরা
কেউ প্রকৃত প্রেমিক না
জানে
শুধু সুচারু অভিনয়।
***
জারজ
শিশুর মাতৃভূমি
এবার
নতুন গল্প লেখো,
বীজের
উল্লাসগীত গাও
নাড়ী
ছিঁড়ে স্বাধীন হয়ো না।
***
এখন
আর লিখবো না,
জানলা
ছুঁয়েছে বৃষ্টির আঙ্গুল;
নখে
এঁকে দেবো চাঁদের প্রতিবিম্ব
এখন
আমি আর লিখবো না।
গুয়াহাটি,
অসমের ‘কবিতা এখন’
পত্রিকায় , প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত।
@কমলিকা |
মোড়ের
সেই হলুদ বাড়িকে,
বলে
এসো শ্রাবণী মেঘ,
মেয়েটি এখনো বৃষ্টি ভিজেনি।
***
এক
চুপকথার রাতে চন্দ্রাবলী
রাহুকে
দিয়েছিল জোছনা মন,
মেঘ
কথা লুকানোর ছুতোয়
এখনও
দুহাতে রাখে আগলে
ঠিক
সেই অবুঝ আগের মতো।
***
প্রেমিককে
শক্ত মাটি ভেবে আঁকড়ে
দেখি
আমার গায়ে ফুটে সফেদ শেকড়
প্রেমিক
রাস্তা পেরিয়ে গন্তব্যে যায় চলে
আমার
আর যাওয়া হয়ে ওঠে না।
***
শিকড়ের
শৈশবকে আদর করছে মায়ের হাত,
দুই
চোখে জল নিয়ে সে তাকায়
ছোট্ট
বনসাই।
গুয়াহাটি,
অসমের ‘কবিতা এখন’
পত্রিকায় , প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত।