‘শিকড়
ও মাটির ফাঁকে
গাঢ়তর
জমে থাকে
চন্দ্রাহত
বেদনা অপার...’
প্রকৃতির
সৌন্দর্যের মাঝে লুকিয়ে থাকা বেদনার রূপ হল কবি দেবলীনা সেনগুপ্তের দ্বিতীয়
কাব্যগ্রন্থ - চন্দ্রাহত। এই বইয়ে কবি প্রকৃতির কোলে এঁকেছেন তাঁর যত্নে লালিত তেল
সিঁদুরেরে সংসার।সেখানে কখনও ভিড় করেছে ভালবাসা, কখনও অজানার হাতছানি
উপেক্ষা, কখনও বা না পাওয়া হতাশা বিন্দু। কবির লেখার চালে রয়েছে এক
আটপৌরে ভাব। যেন মা মাসি রান্নাঘরে টুং টাং শব্দে ব্যস্ত, পোলাও কালিয়ার মাঝে
গুঁজে দেয় স্নেহের কিসমিস। সকল ব্যর্থতারা কাঁচা আনাজে মিশে ছড়ায় সুবাস, রাঁধুনির
মুখে গর্বের হাসি।
‘সন্মুখে
একথালা জুঁইফুল ভাতের পাশে
সোনারং
হাত বেরে দিত
পঞ্চব্যাঞ্জনের
অমৃত কবিতা
শেষ
পাতে একবাটি দুধে
সোহাগে
গলে যেত খেজুর পাটালির কোমলতা’
এ বই কবির হাতে গড়া সংসারকে বহন করে।তাই
ঈশ্বর থেকে কবির বাবা, কেউ বাদ যাননি কবির চিন্তার পৃষ্ঠা থেকে। যেন
কবির সকলের সাথে সাথে যুদ্ধ, নিজেকে খোঁজার যুদ্ধ। চারপাশের চোরাবালির মাঝে
তলিয়ে যেতে কবির বড় অনীহা। তাই সে গর্জে ওঠে বারবার – যেন বলে যেতে চায় তাঁর
সাধারণের মধ্যে যে অসাধারণ রয়েছে তাকে খুঁজে বের করার দায় কবির নয়, আমাদের।
‘একা
একা নারীর মতোই
ঈশ্বরের
দুচোখে জল শুধু জল
ভালোবাসার
এবং ভালোবাসতে না পারার...’
‘শস্যের
পাশে লিখে রাখি ক্ষুধা ও আহার
মুঠোভরে
তুলে নি
যখন
যা মন
মুঠোখুলে
দেখি যখন
শূন্য
আকাশ শুধু মরুবালু রং...’
চন্দ্রাহত বইটির প্রচ্ছদ ছবি হিসেবে সুন্দর
কিন্তু বইটির সাথে সঙ্গতে একটু তাল চ্যুত মনে হয়েছে। কবিতাগুলো সাজানোয় কোথাও
কোথাও একটু অগোছালো ছাপ, যেমন আটপৌরে কবিতার ঠিক পরেই স্বদেশের জয়গাঁথা
একটু রসভঙ্গ করে। যেমন করে চেরাপুঞ্জির সৌন্দর্যে হারিয়ে পাঠক হঠাৎ রবীন্দ্রনাথকে
দেখে হোঁচট খাবেন। কবি দেবলীনার সবে চলা শুরু এবং এসব ছোটো খাটো নুড়ি পাথর বেছে
উনি ভবিষ্যতের রাস্তা সুদৃঢ় ও সুমসৃণ করবেন সুনিশ্চিত।
সবশেষে এই বলা যায়, যে বইয়ের আমেজ কবি
সঞ্জয় চক্রবর্তী তাঁর মুখবন্ধে বেঁধে দিয়ে যায় সুনিপুণ শব্দে সেখানে আর কিছু
বলাটাই বাচালতা। শুধু মুখ বন্ধ করে ডুব দিতে হয় এক অমোঘ শব্দারণ্যে।
‘হাত
ধরো, চলো যাই মিলে
অক্লান্ত
পদাতিক মিছিলে’
‘পড়ে
থাক নিছক রূপটান
শরতের
সুধা নিয়ে
দেহমন্দিরে
বাজুক
রূপগান।’
বই : চন্দ্রাহত
লেখিকা : দেবলীনা সেনগুপ্ত
প্রকাশকাল : ২০১৬
প্রকাশক : ভিকি পাবলিশার্স
প্রচ্ছদ : শুভজিত পাল
প্রকাশিত ' মে'খানা - শুধু কবিতার ' পত্রিকায়, পঞ্চম প্রকাশ, মে, ২০১৯ ( গুয়াহাটি, অসম )