July 18, 2020

বর্ণমালার ক্ষত

যে কবিতা লিখবো বলে কলম ধরেছি

@কমলিকা 

জানি লেখা হয়ে গেছে বহুবছর আগে।

সেখানে দাঁড়িয়ে এক মধ্যবয়সী যুবক,

হাতে তাঁর রক্তস্নাত কাঁটাতার গুচ্ছ

(এই অব্দি পড়েই যাঁরা ভাবছেন যীশু

ও সেই বহুল পরিচিত ক্রুসিফিকশন;

জনান্তিকে জানাই,ভুল ভেবেছেন)

যুবকের দিকে আলো ফেলা হোক

ডি এন এ টেস্ট ছাড়াই বলা যায়,

চেনা যায় নিজের পূর্ব জন্মের মুখ।

কাঁটাতার ধরা শান্ত হাত এগিয়ে আসে

সফেদ কাগজে ছোঁয়ায় লাল আঙ্গুল,

আরো অনেক অনেক টিপ ছাপ আঁকা

সেই লাল কাগজই আসলে কবিতা।

প্রথমে অবশ্য সঠিক বোঝা যায় না

সাধারণ ভোটের স্লিপ ভেবে হয় ভুল

নেহরুর পক্ষে বা বিপক্ষে কত ভোট

এই নিয়ে টেবিল সরগরম করা যায়,

ক্ষত চিহ্ন তখন ধীরে ধীরে মেলে চোখ

হয়ে ওঠে একেকটা রাগী বর্ণমালা

ঠিক তখনই এ কবিতা লেখা হয়,

বলে যায়,মাতৃসুধা ঘুরে শরীর শিরায়

নিয়ে এসো কাগজ,নিয়ে এসো কাঁটাতার

নতুন আঙ্গুল চিহ্ন সাজাবো এবার । 



১৪.১০.২০১৮ এ দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে প্রকাশিত। (গুয়াহাটি,অসম)


চতুষ্কোণ

১) সোহাগ-বন্দর

@কমলিকা 

ঠোঁট তার সোহাগি ঝড় শেষে
ছড়িয়েছে এখন মৌন প্রশান্তি
সমুদ্রের নীলাভ জল মাঝে
জাহাজ মাস্তুল গেছে টুটে কবে
দিগ্ ভ্রষ্ট নাবিক আমি অপেক্ষায়
ময়ূরপঙ্খীর দেখা মেলে যদি
পাবো তবে মাটির দৃপ্ত পুনরঘ্রাণ
বন্দরে বলবো আমি সিন্দবাদ

 

২) নেশা

যে ধোঁয়া ওঠা চায়ের পেয়ালা
তোমার কবোষ্ণ ঠোঁট ছোঁবে বলে
অপেক্ষায় থাকে শ্রাবণ বিকেল
সেও জেনে ফেলেছে সত্যটা
তোমার নেশা কতটা গভীর খাদ
শুধু তলিয়ে গিয়েই বাঁচা সম্ভব


৩) সোনাফুল

যে রাস্তায় আমি চলি
তার শরীর ভরে আজ
নতুন সোনাফুল অলঙ্কার
তোমার লিপি অভিসার অঙ্গে
কবিতা চন্দন সাজ
সে কি এতটাই সুন্দর
ছুঁয়ে দেখবে না একবার, প্রেম?


৪) ক্যাপুচিনো

আজকাল আয়নার দিকে
প্রায়েই চেয়ে থাকি আমি
অথবা আয়না আমাকে
দু’জনের খঞ্জ ছলে অবিরাম
আয়নারও একটা কফিশপ দরকার
দরকার এক পুরনো আরশিবন্ধু ।

 

সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ২৮.০১.২০১৮ এ (শিলচর,অসম)


July 12, 2020

আমি আর লিখবো না

@কমলিকা 
রক্ত গোলাপ, চকলেট, কার্ড

এরা কেউ প্রকৃত প্রেমিক না

জানে শুধু সুচারু অভিনয়।

***

জারজ শিশুর মাতৃভূমি

এবার নতুন গল্প লেখো,

বীজের উল্লাসগীত গাও

নাড়ী ছিঁড়ে স্বাধীন হয়ো না।

***

এখন আর লিখবো না,

জানলা ছুঁয়েছে বৃষ্টির আঙ্গুল;

নখে এঁকে দেবো চাঁদের প্রতিবিম্ব

এখন আমি আর লিখবো না।



গুয়াহাটি, অসমের ‘কবিতা এখন’ পত্রিকায় , প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত।


মেঘদূত

@কমলিকা 

মোড়ের সেই হলুদ বাড়িকে,

বলে এসো শ্রাবণী মেঘ,

মেয়েটি এখনো বৃষ্টি ভিজেনি।


           ***


এক চুপকথার রাতে চন্দ্রাবলী 

রাহুকে দিয়েছিল জোছনা মন,

মেঘ কথা লুকানোর ছুতোয়

এখনও দুহাতে রাখে আগলে

ঠিক সেই অবুঝ আগের মতো।


           ***


প্রেমিককে শক্ত মাটি ভেবে আঁকড়ে

দেখি আমার গায়ে ফুটে সফেদ শেকড়

প্রেমিক রাস্তা পেরিয়ে গন্তব্যে যায় চলে

আমার আর যাওয়া হয়ে ওঠে না।


           ***


শিকড়ের শৈশবকে আদর করছে মায়ের হাত

দুই চোখে জল নিয়ে সে তাকায় 

ছোট্ট বনসাই।



গুয়াহাটি, অসমের ‘কবিতা এখন’ পত্রিকায় , প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত।


July 01, 2020

তোমাকে...

‘তোমাকে দেখেছি স্বপ্নের মুহূর্তে
তোমাকে দেখেছি প্রেমে-ভালোবাসায়
 
তোমাকে কখনো দেখেছি কি...’
 
     এক বিশাল ক্যানভাস জুড়ে কিছু কাগজ, রঙ, চুমকি, সুতো, পাথরকুচি, যা মনে আসে সব- ও একটু মন ও মেধা মেলালেই তৈরি হয় কোলাজ । নবীন কবি কোলাজ রায় তার সেই নামকেই মিশিয়ে তৈরি করেছেন এই কবিতা কোলাজ ‘তোমাকে...’
 
     কবির প্রথম বই, এক ফর্মার। মোট চোদ্দটি কবিতায় কবি সজিয়েছেন এক মায়াময় জগৎ। নবীন মনে অকাঙ্খিত প্রিয়জনের ছবি আঁকে শব্দ রঙের ছোঁয়ায়।
 
‘অকারণে শুধু হেঁটে যাই
মুখোমুখি পাই যদি পথে’
 
‘ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয়নি
কত কথার পরও দিইনি
শুধু কবিতায় লিখেছি। ’
 
     তবে প্রেম এমনই এক অনুভূতি যে সাথে ছায়ার মতো নিয়ে আসে বিরহকে। তাই কবি লিখছেন-
 
‘মিলনের শেষদিনে
পথ চলে যায় পথের উদ্দেশে
আমি শুধু হেঁটে যাই
বহু দূর চলে যাই...’
 
‘তুমি স্বপ্ন, আবার শব্দ হয়ে স্বপ্ন ভাঙো
স্বপ্নে আসো , তবু  থাকো মুখ লুকিয়ে।’
 
     কবি শুধু প্রেমকেই মেলে ধরেনি এই কাব্যভুবনে। এসেছে কিছু চাওয়া-পাওয়া, কিছু সংসারের সুখ ও অসুখ।
 
‘এখন পর্যন্ত ব্যর্থ আমি
তারপরও
সমর্পণ করিনি মৃত্যুর কাছে’
 
‘চিতাভস্মে পড়ে আছে পোড়া অলংকার
অন্তিম গন্তব্য শুধু
অলংকারের শেষ ঝঙ্কার’
 
     এই আমাদের ক্ষুদ্র জগৎ ও তার পাওয়া-না পাওয়ার হিসেবের মাঝেও কবি কিন্তু খুঁজে চলেছে প্রেম। যে প্রেমের কাছে সকল হতাশা, ইগো , দুঃখ সব দূর করে নিজেকে মেলে ধরা যায়।
 
‘বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি
স্তব্ধ শব্দ, স্তব্ধ কথা, স্তব্ধ লেখা
তোমার সামনে নতজানু
তোমাকে নিয়ে যত কবিতা।’
 
    

কবি শুনিয়ে গেছেন সমস্ত বিপদসংকুল রাস্তা পার করে অতিক্রম করা ভালোবাসার গন্তব্য- জীবনের এভারেস্ট পর্বতমালা, যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার ভালোবাসার ঈপ্সিত মানুষ।
 
‘মুষল ধারায় বৃষ্টি আসুক
ঝড় হোক
ফিরবো না...’
 
‘রং চলে যায় আলোর সাথে
মনের রং জাগে সন্ধ্যার গায়ে
যেখানে কেবল আলো হয়ে
প্রতীয়মান শুধু তুমি। ’
 
     ‘তোমাকে...’ কাব্যগ্রন্থ মুলত ভালোবাসার কথা বলে, তার ধরা পড়া ও হারিয়ে যাওয়া তার রূপ-রং-বর্ণ, তার জীবন যাপন। বইটির কবিতা গোছানোয় একটু অগোছালো ভাব রয়েছে, তবে প্রথম প্রেম ও প্রথম বই – দুটোই মনের কাছের,ও মন চিরটাকাল এলোমেলো থাকতেই ভালোবাসে। কোলাজ রায়ের কলম থেকে আগামী দিনে আরো অনেক কবিতা পড়ার অপেক্ষায়। এখন সময় বইয়ের পাতা মেলার, আর মনে করার সেই মানুষটিকে, যাকে বলতে চেয়েছি কোনো এক বসন্তে- ভালবাসি ‘তোমাকে...’


 
বই                   : তোমাকে...
লেখক             : কোলাজ রায়
প্রকাশকাল      : ২০১৮   
প্রকাশক          : বাংলা সাহিত্য সমাজ, গুয়াহাটি   
প্রচ্ছদ              : নয়নজ্যোতি শর্মা


More to see...